মেটে হান কে ছিলেন? (Who is Mete Han)
গতকাল কুরুলুস উরহান ভলিউম -০৪ এ মেতে হানের নাম শুনে—অনেকের ভিতর কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে, কে এই মেতে হান? সংক্ষেপে যেনে তবে।
মেটে হান ছিলেন প্রাচীন হুন সাম্রাজ্যের শাসক। চীনা ইতিহাসে তিনি পরিচিত "মোদু শানিউ" (Modu Chanyu) নামে। তিনি খ্রিস্টপূর্ব ২০৯ সালে ক্ষমতায় আসেন এবং শাসন করেন প্রায় ৩৫ বছর। “মেতে হান ছিলেন প্রাচীন তুর্কি ইতিহাসের এক কিংবদন্তি নেতা ও যোদ্ধা। তিনি প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৩০০–২১৮ সালে হুনদের (Huns) নেতা ছিলেন। মূলত তিনি চীনা বর্শনবাহিনী ও সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণে রাখতেন, বিশেষ করে উত্তর চীনের সীমান্তে। তিনি হুনদের সম্রাট ছিলেন এবং তার নেতৃত্বের কারণে শত্রুরা তার সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহস পেত না। তার কৌশল ও যুদ্ধদক্ষতা তাকে সময়ের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষ বানিয়েছিল। মেটে হান শুধু সেনাপতি নয়, বরং একজন কৌশলী রাষ্ট্রনায়কও ছিলেন, যিনি নিজের দেশের সীমান্ত ও মানুষকে নিরাপদ রাখতে সকল কৌশল প্রয়োগ করতেন। তাঁকেই অনেক ইতিহাসবিদ “প্রথম মহান তুর্কি সম্রাট” হিসেবে বিবেচনা করেন কারণ—তিনি তুর্কি গোত্রগুলোকে প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে আনেন। তিনি তুর্কি সামরিক বাহিনীকে নতুনভাবে সংগঠিত করেন। তাঁর সময়েই তুর্কি রাজনৈতিক পরিচয়ের সূচনা ঘটে।
শৈশব: সংগ্রামে ভরা এক ভবিষ্যৎ নেতার জন্ম:- মেতে হানের শৈশব ছিল অত্যন্ত কঠিন। তাঁর পিতা তুঙু (Touman) তাঁকে উত্তরাধিকারী হিসেবে চাননি। তাঁর ক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তাকে ভয় পেয়ে তাকে দূরে সরানোর জন্য নানা পরীক্ষা ও বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করা হতো। কিন্তু মেটে হান একের পর এক পরীক্ষা পেরিয়ে প্রমাণ করেছিলেন, তিনি শুধু একজন যুবরাজ নন, বরং একজন জন্মগত নেতা এবং অসাধারণ সামরিক প্রতিভা। তুর্কি সেনাবাহিনীর আধুনিক কাঠামোর জনক! মেতে হানের সবচেয়ে বড় অবদান হলো সামরিক শৃঙ্খলা ও সংগঠন তৈরিতে তাঁর বিপ্লবী পরিবর্তন।
১০-এর সামরিক পদ্ধতি:-তিনি প্রথম ১০ জন পরে ১০০ জন তারপর ১০০০ জন তারপর ১০,০০০ জন এর ভিত্তিতে সেনাবাহিনী গঠন করেন।এটি পরে তুর্কি, মুঘল, মঙ্গল, সেলজুক, উসমানীয়—সব সাম্রাজ্যে ব্যবহৃত হয়। তিনি ইতিহাসের প্রথম সুশৃঙ্খল অশ্বারোহী বাহিনী (Cavalry Army) গড়ে তোলেন। তাঁর সৈন্যরা ছিল দ্রুতগতিশীল, সংগঠিত ও ভয়ংকর আক্রমণ দক্ষতায় অনন্য।
সামরিক সাফল্য: যে কারণে শত্রুরা তাঁর নাম শুনে ভয় পেত,মেতে হান এমন একজন সেনানায়ক ছিলেন, যার কৌশলগত বুদ্ধিমত্তা সময়ের বহু আগেই আধুনিক যুদ্ধনীতির ইঙ্গিত দেয়। চীনের বিরুদ্ধে বিজয়: হান রাজবংশ ছিল সেই সময়কার বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সাম্রাজ্যগুলোর একটি। কিন্তু মেতে হান তাঁদের বারবার পরাজিত করেন। শেষমেশ চীন বাধ্য হয় শান্তিচুক্তি করতে এবং নিয়মিত কর (tribute) প্রদান করতে। এটাই প্রমাণ করে—মেতে হান শুধু শক্তিশালী ছিলেন না, ভয়ঙ্কর প্রভাবশালীও ছিলেন।
তুর্কি জাতির প্রথম রাষ্ট্রব্যবস্থা:- মতে হানের আগে তুর্কিরা ছিল গোত্রভিত্তিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জনসমষ্টি। তিনি প্রথমবারের মতো একটি কেন্দ্রীয় প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে—আইন, সামরিক ব্যবস্থা, প্রশাসনিক কাঠামো, কূটনীতি! সব কিছু নিয়ন্ত্রিত হতো একটি কেন্দ্র থেকে। তাই তাঁকে বলা হয়: “Turkic State Structure-এর প্রথম স্থপতি।”
চীনের সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তি:- মেতে হান ক্ষমতায় থাকার সময় চীন হুন সাম্রাজ্যের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ শান্তিচুক্তি সই করে। এই চুক্তি দুই সাম্রাজ্যের মধ্যে সমান মর্যাদার ভিত্তিতে হয়েছিল—যা সে সময় খুবই বিরল ছিল। ইতিহাসে এই চুক্তি পরিচিত “Heqin Treaty” নামে।
মৃত্যু ও উত্তরাধিকার:- খ্রিস্টপূর্ব ১৭৪ সালে মেতে হান মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর গড়ে দেওয়া সাম্রাজ্য এবং প্রশাসনিক কাঠামো তাঁর উত্তরসূরিরা শত শত বছর ধরে ধরে রাখে। আজকের তুরস্ক, আজারবাইজান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তানসহ পুরো তুর্কি বিশ্বের রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি তাঁর হাতেই গড়ে ওঠা মডেল থেকে এসেছে। মানুষ তাঁকে কম চেনে কেন? অনেক কারণ আছে—তাঁর সময়কাল ছিল অত্যন্ত প্রাচীন (৩০০০ বছর আগে) অধিকাংশ নথি চীনা সূত্রে সংরক্ষিত! আধুনিক মিডিয়ায় তাঁর নাম কম আসে!
কিন্তু তুর্কি ইতিহাস জানলে বোঝা যায়—মেতে হান ছিলেন তুর্কি জাতিকে রাষ্ট্রের পরিচয় দেওয়া প্রথম মহান নেতা।আজকের প্রজন্মের জন্য মেতে হানের গুরুত্ব মেতে হান তুর্কি বিশ্বের মধ্যে আজও—সামরিক শৃঙ্খলা, রাষ্ট্রচিন্তা, নেতৃত্ব, দৃঢ়তা—এসবের প্রতীক। তাঁর জীবন ইতিহাস পড়লে বোঝা যায় কিভাবে একজন নেতা গোত্রভিত্তিক একটা জাতিকে বিশ্বশক্তিতে পরিণত করতে পারে।
সর্বশেষ:- মেতে হান শুধু একজন কিংবদন্তি সম্রাট নন—তিনি তুর্কি জাতির রাষ্ট্র, সেনাবাহিনী, নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রথম স্থপতি। এত বছর পরেও তাঁর অবদান অম্লান এবং তুর্কি ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলোর একটি।
লিখা সংগ্রহ:- Ai থেকে! সংগ্রহ করেছেন:- Rifat Alam Rihan.
